যে গ্রামে সন্তান জন্ম দেওয়া এবং মৃতদেহ সৎকার করা পাপ
ফিচার ডেস্ক ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকমপ্রকাশিত: ১২:২৪ ২৭ মার্চ ২০২২ আপডেট: ১২:২৫ ২৭ মার্চ ২০২২

মামফে ডাভ গ্রামে সন্তান জন্ম দেওয়া পাপ। ছবি: সংগৃহীত
প্রত্যেক দেশ ও জাতির মধ্যে কিছু আলাদা আলাদা নিয়মকানুন থাকে। যা সেখানকার মানুষ মেনে চলেন। কেউ ইচ্ছায় আবার কেউ অনিচ্ছাকৃত সেসব নিয়মে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখেন। আজ আপনাদের এমন একটি গ্রামের প্রথা সম্পর্কে জানাবো যা আপনাকে অবাক করবে।
পশ্চিম ঘানায় একটি গ্রাম রয়েছে, নাম মামফে ডাভ। এই গ্রামে এখন যে বাসিন্দারা থাকেন খুব আশ্চর্যভাবেই তাদের কারো জন্ম এই গ্রামে নয়। কারণ সেখানে সন্তান জন্ম দেওয়াকে প্রথাবিরোধী এবং সৃষ্টিকর্তার অসন্তুষ্টির কারণ বলে মনে করা হয়। তাই সে গ্রামে সন্তান জন্ম দেওয়ার কোনো অনুমতি নেই।
গ্রামের এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত দুঃসহ যন্ত্রণাও সহ্য করেছেন অনেক সন্তানসম্ভবা মা। তবুও অনুমতি পাওয়া যায়নি। সন্তান জন্মের জন্য তাদেরকে ছুটতে হয়েছে অন্য গ্রামে।
শুধু তাই নয়, এখানে সন্তান জন্ম দেওয়া যেন পাপ। আর সেই পাপ যেহেতু এক গর্ভবতী মা নিজের শরীরে বয়ে নিয়ে বেড়ান তাই সেই সব নারীদের ওপর একরকম অত্যাচার চলে। তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হয়, প্রসূতি অবস্থায় ছুটতে হয়, এমনকি তীব্র প্রসববেদনা নিয়েও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়।
তবে যুগের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়। আগেকার দিনের নারীরা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করলেও এমনটা কিন্তু এখন হয় না। তাই অনেক নারীই আজকের যুগে দাঁড়িয়ে এই নিয়মের বিরোধীতা করতে শুরু করেছেন। এখানেই তাদের সন্তান জন্মদানের অনুমতি দেওয়া হোক বলে দাবি তুলেছেন তারা।
এই গ্রামেরই একজন নারী হানাহ কোসিনার বক্তব্য, “আমি ৯ মাসের গর্ভবতী। কিন্তু এখানে সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুমতি নেই। সন্তান প্রসব করতে আমাদেরকে অনেক দূরে যেতে হবে এমনটাই নিয়ম। প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি পেতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। দ্বিতীয় সন্তানের সময়ও যেতে হয়েছিল অন্য একটি গ্রামে। তবে এখন কাছাকাছি একটি ক্লিনিক হওয়ায় তৃতীয় সন্তান প্রসবের সময় সেখানেই যাবো বলে ভেবে রেখেছি।”
হানাহ কোসিনা গ্রামের মোড়লদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা নিজের গ্রামেই সন্তানের জন্ম দিতে চাই। দয়া করে এই নিয়ম বিলুপ্ত করুন।”
মোড়লদের মধ্যে একজন কওয়ামে সিদিতসে বেনুয়ার কথায়, “একসময় স্বর্গ থেকে বাণী এসেছিল যে আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে আসেন। তাই এটি একটি পবিত্র ভূমি হিসেবে বিশ্বাস রয়েছে আমাদের। এখানে বসবাস করতে হলে এখানকার নিয়মগুলোও মেনে চলতে হবে। এখানে যেমন কারোর জন্মও হবে না, তেমনই কারো সৎকারও হবে না। তাই এখানে থাকতে হলে এসব ব্যাপারে অনুগত হয়ে চলতে হবে। আর সেই কারণেই আমরা এখনো এখানে আছি।”
ওই অঞ্চলের আশেপাশের অন্যান্য গ্রামগুলোতেও এই রকম নিয়ম চালু ছিল। কিন্তু এখন সেসব বিলুপ্ত হয়েছে। তবে এই গ্রামে তা হচ্ছে না কারণ এখানকার মোড়লরা এই নিয়ম বজায় রাখতে চায়।
ডেইলি বাংলাদেশ/এএ