ব্যানারে নিহত ছেলের ছবি জড়িয়ে কাঁদলেন মা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকমপ্রকাশিত: ১৭:২৭ ১২ জানুয়ারি ২০২২

সংবাদ সম্মেলেনে নিহত বেলালের স্ত্রী হাজেরা বেগম শান্তা ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
লক্ষ্মীপুরে পরিকল্পিতভাবে বেলাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলেনে নিহত বেলালের স্ত্রী হাজেরা বেগম শান্তা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহতের বেলালের মা খাদিজা বেগম, ভাই মানিক হোসেন, তার শিশু মেয়ে মুনতাহা ও ছেলে ইসমাইল হাসান।
সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে ছেলে বেলালের ছবি জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘ওরা আমার ছেলেটারে মেরে ফেলছে, এখন আমি বেঁচে লাভ কি ? এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত আমি তাদের বিচার চাই। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমি আর আমার ছেলেরে ফিরে পাবো না।’
বেলালের স্ত্রী শান্তা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার দিন সিএনজিতে বেলালসহ ৪ জন যাত্রী ছিলেন। বেলালের মৃত্যুর পরপরই বাকি ৩ জন যাত্রী পালিয়ে যায়। সিএনজি চালকও পালিয়ে গেছেন। চালক আসামিদের পরিচিত। স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার ঘটনায় সদর মডেল থানায় শান্তা ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
আসামিরা হলেন সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ গ্রামের মো. সুমন, তার ভাই রিপন হোসেন, শিপন হোসেন, একই এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেন ও একই ইউপির চরভূতা গ্রামের তারেক হোসেন।
জানা গেছে, নিহত বেলাল সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউপিরর চরভূতা গ্রামের বাসিন্দা ও নারিকেল-সুপারি ব্যবসায়ী ছিলেন। আসামিদের ভয়ে তিনি এলাকা ছেড়ে ইউপির চৌরাস্তা এলাকায় স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাসা ভাড়া থাকতেন।
বেলালদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে সুমনদের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে বেলালের বাবার সঙ্গে তাদের একাধিক মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। বেলালের বাবার মৃত্যু পর নিজেই মামলাগুলো তদারকি করতেন। এতে প্রায়ই বেলালকে আসামিরা হত্যা করার হুমকি দিয়েছিল। ৪ জানুয়ারি ভোরে বেলালের বর্গাদারে চাষকৃত জমিতে আসামিরা এসে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে চাষকৃত ৪ একর জমির সবজি কেটে বিনষ্ট করে দেয় তারা। তখন বাধা দিলে তারা বেলালকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়।
সংবাদ সম্মেলেন হাজেরা বেগম শান্তা লিখিত বক্তব্যে বলেন, ফসল বিনষ্টের প্রকাশিত সংবাদের পত্রিকা সংগ্রহের করে ৬ জানুয়ারি সদর মডেল থানায় জিডির করবে বলে বেলাল ঘর থেকে বের হয়। দুপুর ১২টার ২১ মিনিটে আসামি তারেক কল দিয়ে বেলালের কাছে কোথায় আছে জানতে চায়। বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির এলাকার স্টেডিয়াম সড়কের মুখে সড়ক দুর্ঘটনায় বেলালের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তখন রটানো হয়েছিল, বেলাল সিএনজি যাত্রী ছিলেন। এ সময় দ্রুত গতির একটি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা পাশ থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। তাৎক্ষণিক অটোরিকশা চালক পালিয়ে যায়। এতে মারাত্মক আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে এলাকার কয়েকজন শান্তাকে জানান, দুর্ঘটনার ঘটনায় মামলা দায়ের করলে বেলালের মরদেহ ময়নাতদন্তের নামে কাটাছেঁড়া করা হবে। এ ভয়ে শোকে পাগল প্রায় বেলালের পরিবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দাফনের আবেদন করে। পরে বাড়িতে নিয়ে মাথা, পিঠ ও বাম পায়ের হাটুর ওপর ধারালোর অস্ত্রের আঘাত দেখে পুলিশের সহযোগীতায় ৭ জানুয়ারি মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে হাজেরা বেগম শান্তা বলেন, দুর্ঘটনা হলে সিএনজির ক্ষতি হতো, কিন্তু সিএনজি অক্ষত রয়েছে। শুধু আমার স্বামীই মারা গেছে। এর আগের দিন রাতে কেউ একজন আমার স্বামীকে সাবধানে থাকার জন্য মোবাইলে জানিয়েছে। ঘটনার দিন দুপুরে তারেক আমার স্বামীর অবস্থান জানতে চেয়েছে। তারাই আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে। আমি এ হত্যার বিচার চাই।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল মতিন বলেন, মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক। ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তখন প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডেইলি বাংলাদেশ/এমকে