আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন মেসির সঙ্গী-আর্জেন্টিনার ভবিষৎ
স্পোর্টস ডেস্ক ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকমপ্রকাশিত: ২৩:৫১ ৭ জানুয়ারি ২০২২ আপডেট: ০০:০১ ৮ জানুয়ারি ২০২২

মেসির সঙ্গে মাম্মানা (ছবি: ইনস্টাগ্রাম)
মাত্র সাত বছরের ক্যারিয়ারে ঘুরেছেন অনেক পথ। শুরুটা আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভারপ্লেটে। অনেকেই ভেবেছিলেন আর্জেন্টিনার আগামী দিনের সেন্টারব্যাক হবেন তিনি। কিন্তু এরপর আর সুযোগ পাননি। তাই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের মনে দাগ কাটাতে পারেননি এমানুয়েল মাম্মানা। অনেক দিন পর আবারো এক করুণ বর্ণনায় সংবাদের শিরোনামে মাম্মানা।
চোটের কারণে ২৫ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের পথ হারিয়েছে। এ শোক মেনে নিতে পারেননি। তাই আত্মহত্যা করতে চলতি ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে যান মাম্মানা।
কেন আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, কীভাবে অন্য এক ব্যক্তি তাকে বাঁচিয়েছেন, সেসব ঘটনা নিজেই আর্জেন্টাইন রেডিও ‘রাদিও দে লা রেদ’-এ বলেছেন মাম্মানা।
তার নামটি আর্জেন্টিনার ভক্তদের কাছে একেবারে অপরিচিত নাও হতে পারে। ২০১৪ সালে রিভারপ্লেটের জার্সিতে তার অভিষেক, কিন্তু তার আগে বয়সভিত্তিক ফুটবলে আলো ছড়ানোয় বিশ্বকাপের আগে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচেই আকাশি-সাদা জার্সিতে অভিষেক হয় মাম্মানার।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার যাওয়ার সম্ভাবনা কমই ছিল, তবে সে সময়ের আর্জেন্টিনা কোচ আলেহান্দ্রো সাবেয়ার তার খেলা পছন্দ হয়েছিল। রক্ষণে ভালো মাম্মানা যে বল পায়েও স্বচ্ছন্দ। ‘ভবিষ্যতের জন্য ওর দিকে চোখ রাখতেই হবে’—স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে ৭৬ মিনিটে মাঠে নামা মাম্মানাকে নিয়ে সেদিন বলেছিলেন সাবেয়া। আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ডিফেন্ডার রবার্তো আয়ালাকে টেনে এনে সে সময় স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা শিরোনামে লিখেছিল, ‘এমানুয়েল মাম্মানা, ভবিষ্যৎ আয়ালা!’
আরো পড়ুন: আবারো ম্যান সিটিতে ফিরছেন অ্যাগুয়েরো!
এরপর রিভারপ্লেটে দুই বছর শেষে লিওঁতে আলো ছড়ানো। চেলসি, টটেনহাম, আর্সেনাল, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, ফিওরেন্তিনা, আতলেতিকো মাদ্রিদসহ ইংল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনের বেশ কয়েকটি ক্লাবের আগ্রহ জাগে তাকে ঘিরে। কিন্তু লিওঁ থেকে ২০১৭ সালে মাম্মানা গেলেন দলবদলে বেশ ভালো কয়েকজন খেলোয়াড় কিনে নেয়া রাশিয়ান ক্লাব জেনিত সেন্ট পিটার্সবার্গে। ২০১৮ বিশ্বকাপ রাশিয়ায়, জেনিতে আর্জেন্টিনার আরো দুয়েকজন খেলোয়াড় ছিলেন। সব মিলিয়ে তাই দলবদলটা মাম্মানার জন্য ভালো হবে বলেই ভাবা হচ্ছিল!
এরমধ্যে ২০১৭ সালে হোর্হে সাম্পাওলি দায়িত্ব নিয়েই ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে ডাকেন মাম্মানাকে। আর্জেন্টিনার ১-০ গোলে জয়ের সে ম্যাচে মেসি-দি মারিয়াদের সঙ্গে খেলার সুযোগ মেলে মাম্মানার, নামেন বদলি হয়ে। সিঙ্গাপুরকে ৬-০ গোলে হারানোর পরের ম্যাচে শুরু থেকেই খেলেছেন। সাম্পাওলির রক্ষণরেখা ওপরে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবলের কৌশলে মাম্মানার মতো গতিশীল, বল পায়ে স্বচ্ছন্দ ডিফেন্ডারই ভালো যান বলে ধরে নেয়া হচ্ছিল।
কিন্তু এরপর এসিএল (অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট) চোট তার বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালের মার্চে একবার, ২০১৯-এর অক্টোবরে আবার। ডেভিড বেকহামকে ভুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া এই চোটে পরপর দুই বছরেই পড়লেন, তাতে দুই দফায় ১৫ মাস ছিলেন মাঠের বাইরে। মাঝে রাশিয়ায় হয়ে যাওয়া ২০১৮ বিশ্বকাপেও তাই আর খেলা হলো না মাম্মানার।
আরো পড়ুন: বর্ষসেরার তালিকায় নেই আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনি
এ তো গেল শারীরিক ধাক্কা, মানসিকভাবে এর চেয়ে বড় একটা ধাক্কা এর অনেক আগেই পেয়েছেন মাম্মানা। তার মা আগেই মারা গেছেন, ২০১৭ সালে জেনিতে যাওয়ার আগে বাবাকেও হারান মাম্নানা। সে ধাক্কা আর সইতে পারছিলেন না আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার। এতটাই যে আত্মহত্যার কথাই ভেবেছিলেন তিনি!
‘যারা মা-বাবা হারিয়েছেন, শুধু তারাই জানেন এটা কতটা কষ্টের। অনেকবারই আত্মহত্যার কথা মাথায় এসেছে। পাগলাটে কিছু একটা করে ফেলার কথা মনে আসত সব সময়’—আর্জেন্টাইন রেডিও ‘দে লা রেদ’-এ কষ্টটা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন মাম্মানা। ভাবনাটা বাস্তবেও রূপ পেয়েই যাচ্ছিল প্রায়! কিন্তু হয়নি এক অচেনা পথিক ‘দেবদূত’ হয়ে আসায়।
মাম্মানা খুলে বলেছেন সে ঘটনা, ‘একদিন অনুশীলনে যাচ্ছিলাম। (বাবার মৃত্যুর) দুই মাস পার হয়ে যাওয়ার পরও আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। কিছু ভালো লাগত না। একা একাই ট্রেনে চড়ার উদ্দেশে পথ ধরলাম। দেখলাম ট্রেন আসছে। জীবনে আর কিছু ভালো লাগছিল না বলেই হয়তো, আমি ট্রেনের দিকে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখনই পেছন থেকে কেউ একজন আমার কলার ধরে টান দেন, আমাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের দিকে নিয়ে আসেন।’
Argentinian defender Emanuel Mammana has left the club. We wish him all the best for the future.
— FC Zenit in English✨ (@fczenit_en) January 7, 2022
📰 https://t.co/66b9ZwXXiC pic.twitter.com/rKllJJupzi
এত দিন পর এসে পিছু ফিরে এখন অচেনা ঐ ব্যক্তির কাছেই অনেক কৃতজ্ঞতা মাম্মানার, ‘ঐ লোকটা আমাকে বাঁচিয়েছেন। আমি জানি না তিনি কে। তবে হৃদয়ের গভীর থেকে তাকে ধন্যবাদ জানাই।’ মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে যে জীবনের স্বাদ আবার পেতে শুরু করেছেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার! এখন তার উপলব্ধি, তার মৃত্যু তার মৃত মা-বাবাও মেনে নিতে পারতেন না, ‘আজ আমার একটা পরিবার আছে, সন্তান আছে। আমার মা-বাবাও চাইতেন না সেটা (আত্মহত্যা)।’
শারীরিক-মানসিক এত চাপের মধ্যে জেনিতে আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি মাম্মানা। দুই দফায় আরেক রাশিয়ান ক্লাব সোচিতে ধারে খেলেছেন। ইউরোপে পাঁচটি বছর কাটানোর পর এখন আবার পুরনো ‘ঘর’ রিভার প্লেটেই ফিরছেন।
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএডি