রুপকথায় নয়, বাস্তবেই রয়েছে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা
সাত রঙ ডেস্ক ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকমপ্রকাশিত: ১৩:৩৪ ২১ জানুয়ারি ২০২১ আপডেট: ১৮:০২ ২১ জানুয়ারি ২০২১

ছবি: সংগৃহীত
এক ছিল বাঁশিওয়ালা। সে তার বাঁশির সুরে শহরের সমস্ত ইঁদুরকে মেরে ফেলে শহরকে বাঁচিয়েছিল ইঁদুরের উৎপাত থেকে। গল্পটা শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে এই গল্পের নায়ক আর কেউ নয়। গ্রিম ভাইদের উপকথা হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার সেই বিখ্যাত বাঁশিওয়ালার কথাই বলা হচ্ছে।
তবে হাজারে হাজারে ধরে উপকথা হিসেবে প্রচলিত হলেও এই ঘটনার সত্যতা আছে কিনা তা নিয়ে অনেক মহলেই অনেক রকমের ধারণা আছে। তবে কাহিনী সত্য হোক বা না হোক, মাইকেল বয়ার গত ২৬ বছর ধরে অভিনয়ের মাধ্যমে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার চরিত্রকে প্রাণদান করে চলেছেন।
প্রতিদিন উজ্জ্বল রঙবেরঙের পোশাকে সেজে বাঁশি হাতে তিনি হেঁটে যান জার্মানির ৬০ হাজার বাসিন্দা নিয়ে গড়ে ওঠা হ্যামলিন শহরের মধ্য দিয়ে। যথারীতি পর্যটকদের মধ্যেও হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালাকে ঘিরে কৌতূহলের অন্ত নেই। ভুলবশত কেউ তাকে মনে করেন রবিন হুড অথবা কোনো সুপারহিরো।
তবে বেশিরভাগই অল্প সময়েই তাকে চিনে ফেলেন। স্বাভাবিক ভাবেই পর্যটকদের মধ্যে তিনি ইনস্টাগ্রামের ছবি তোলার জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আবার অনেকে তার রামধনু রঙের পোশাক দেখে তাকে সমলিঙ্গ আন্দোলনের সহযোদ্ধাও মনে করেন। হ্যামলিনের এই কাহিনী বহু যুগ ধরে বিভিন্ন লেখকের লেখায় স্থান পেয়েছে।
তবে একেকজনের লেখায় একেকরকম পরিবর্তন হলেও এর যে মূল কাহিনী, তা সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত। গ্রিম ভাইদের মূল কাহিনীতে বাঁশিওয়ালাকে একটি ভৌতিক এবং রহস্যজনক চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। গল্পের কাহিনী অনুযায়ী হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা উপযুক্ত পারিশ্রমিক না পেয়ে হ্যামলিনের শিশুদের তার বাঁশির মায়ায় মুগ্ধ করে উধাও হয়ে গেছিলেন।
প্রসিদ্ধ ইংরাজি সাহিত্যের কবি রবার্ট ব্রাউনিং ও এই উপকথার চরিত্রটিকে নিয়ে একটি কবিতা রচনা করেন। বাঁশিওয়ালার সাজে সজ্জিত বয়ার দর্শকদের হ্যামলিন শহর ঘুরিয়ে দেখানোর সময়ে সারি সারি কাঠের বাড়ি, বিয়ের কেক সদৃশ বাড়ি এবং ষোড়শ শতাব্দীর রেনেসাঁ আর্কিটেকচারের নিদর্শন বিস্তারিত বর্ণনা করেন।
হ্যামলিন শহরের পর্যটন শিল্পের অধিকাংশই এই বাঁশিওয়ালার রূপকথার ইঁদুর, বাঁশি, পোশাক ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। স্থানীয় রেস্তোরাঁয় ইঁদুরের লেজের চিহ্ন সম্বলিত থালা, বেকারিতে ইঁদুর আকৃতির পাঁউরুটি, স্যুভেনিরের দোকানগুলোতে পাইপার টিশার্ট, মগ, ইঁদুর ইত্যাদি দেখতে ও কিনতে পারেন দর্শকরা।
এছাড়াও হ্যামলিনের জাদুঘরে একটি লাইট এন্ড সাউন্ড উপস্থাপনা হয়। এছাড়াও গ্রীষ্মকালে খোলা আকাশের নীচে অভিনেতারা সেই বিখ্যাত গল্পকে নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপিত করেন। নিছক মজার গল্প হলেও হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার এই গল্প আজও বাসিন্দাদের আতঙ্কিত করে কিছু ক্ষেত্রে। এখনো বাবা মায়েরা সন্তানের বিপদের আশঙ্কা করে শঙ্কিত হন।
শোনা যায় ১৬০২ সালে এমন এক ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল এবং এই শহরের অসংখ্য শিশু চিরতরে নিখোঁজ হয়ে গেছিলো। তারও আগে ১২৮৪ সালেও এমন শিশু নিখোঁজ হবার ঘটনা ঘটে। তবে ঐতিহাসিকদের মতে হ্যামলিন শহরের কর্মকর্তারা এমন ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটার পরেও কোনো নির্দিষ্ট তারিখে শিশু নিখোঁজের ঘটনা ঘটে তা আড়ালেই রাখতে চান।
এর কারণ কি সত্যিই এমন কোনো বাঁশিওয়ালার আগমন? নাকি আরো গভীর কিছু যা প্রকাশে বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি? উত্তর অজানা। তবে একথা স্পষ্ট যে উপকথাকে ঘিরে অসংখ্য সাহিত্য সৃষ্টি তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক নয়, বরং হ্যামলিন শহরে তথা জার্মানিতে বহুবার নেমে এসেছে বাঁশির সুর, অভিশাপ হয়ে।
ডেইলি বাংলাদেশ/কেএসকে