বাবাকে পেটানোর প্রতিশোধ নিতে হত্যাকাণ্ড!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকমপ্রকাশিত: ০৩:২২ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আপডেট: ০৩:২৪ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

গ্রেফতার আসামিরা। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল সদর ইউপির সাবেক মেম্বার আবু বক্কর সিদ্দিক (রকেট) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উম্মোচিত হয়েছে। বাবা আরমান মিয়াকে অমানুষিকভাবে পেটানোর ঘটনা সহ্য করতে না পেরে ছেলে হৃদয় মিয়ার পরিকল্পনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন রকেট মেম্বার।
গত শনিবার হৃদয় মিয়াসহ ১১ জনকে ফরিদপুর জেলা সদর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে হৃদয় মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া অন্যরা হলেন- সরাইল সদরের বেপারীপাড়ার ধনু বেপারীর ছেলে আরমান মিয়া, সরাইল সদর ইউপির বর্তমান সদস্য মো. শাহ আলম মিয়া (শাহ আলম মেম্বার), আজমান মিয়া, তার ছেলে ফরহাদ মিয়া ও রাশেদ মিয়া, আরমান মিয়ার ছেলে রিয়াদ মিয়া (হৃদয়ের ভাই), রমজান মিয়ার ছেলে আনার মিয়া, নাজু মিয়ার ছেলে ওসমান গণি রুপম, আজমান মিয়ার ছেলে জয়, কাছন মিয়ার ছেলে হৃদয়।
গ্রেফতারদের মধ্যে ফরহাদ মিয়া, আনার মিয়া ও ওসমান গণি সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
এদিকে গ্রেফতারের পর হৃদয় মিয়ার কাছ থেকে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। হৃদয় মিয়া পুলিশকে বলেছে, আমার উচ্চতা ছয় ফুট তিন ইঞ্চি। আমার মতো এমন ছেলে থাকতে বাবাকে পেটানোর প্রতিশোধ নিতে পারবো না কেন? তবে আমি রকেট মেম্বারকে একেবারে মেরে ফেলতে চাইনি। পরিকল্পনা মতো যাদের নিয়ে তার ওপর হামলা করেছি, তাদের মধ্যে একজন দায়ের কোপ দিলে তাকে আর বাঁচানো যায়নি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া তিনজনই হৃদয়ের নির্দেশে হামলার কথা স্বীকার করেছেন।
এর আগে পুলিশ এই মামলায় নান্নু মিয়া, কাচু মিয়া, নিক্সন মিয়া, আকরাম মিয়া, আনোয়ার হোসেন ও হামীম মিয়া নামের ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার ওসি মো. শাহাদাৎ হোসেন টিটু সোমবার বিকেলে জানান, সর্বশেষ গ্রেফতার হওয়া ১১ জনের মধ্যে হৃদয়সহ ছয়জন আদালতে জবানবন্দি দিবে বলে রাজি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত হৃদয়সহ তিনজন জবানবন্দি দেয়নি। ওই তিনজনসহ বাকি আটজনকে ১২ দিন করে রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। জবানবন্দি দেয়া মোট চারজনের জবানবন্দিতেই হৃদয়ের নির্দেশনা ও ছক অনুযায়ী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত এসপি (অপরাধ ও প্রশাসন) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে হামলার কথা স্বীকার করেছে হৃদয়। তবে সে বলেছে, রকেট মেম্বারকে হত্যা করা হোক, সেটা সে চায়নি। কয়েক মাস আগে রকেট মেম্বার লোকজন নিয়ে তার বাবাকে পেটালে সেটি সহ্য হয়নি তার।
উল্লেখ্য, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের প্রাত বাজার এলাকায় নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রকেট মেম্বারকে হত্যা করা হয়।
এর আগে ২০০৩ সালে রকেট মেম্বারের শিশুপুত্র রক্সিকে (১০) হত্যা করে মরদেহ বস্তাভর্তি করে ফেলা হয়। এ মামলায় একজনের ফাঁসির আদেশ ও দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও উচ্চ আদালতে আপিল করে রক্ষা পেয়ে যান দণ্ডিতরা।
ডেইলি বাংলাদেশ/জেডআর