ফেরাউনেরও দরকার হয়েছিলো পাসপোর্ট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডেইলি-বাংলাদেশ ডটকমপ্রকাশিত: ১৭:৪৫ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ আপডেট: ২০:৪০ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ছবি: মিশরীয় ফেরাউন রাজা দ্বিতীয় র্যামেসিস
মানব সভ্যতার এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় প্রাচীন মিশর। সেই মিশরের প্রভাবশালী রাজাদের উপাধি ছিলো ‘ফেরাউন’। ফেরাউনরা ছিলো খুব বেশি ক্ষমতাধর। তাদের কথা অমান্য করার সাধ্য ছিলো না কারো। সেই ফেরাউনদের মধ্যে একজন ছিলেন র্যামিসেস দ্য সেকেন্ড বা দ্বিতীয় র্যামিসেস। মিশরীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ফেরাউন বলা হয় তাকে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য সেই দ্বিতীয় র্যামিসেসে’র মৃত্যুর তিন হাজার পর তার দরকার হয়েছিলো পাসপোর্টের।
ফেরাউন রাজা প্রথম সেতি’র পুত্র ছিলেন তিনি। শুরুতে তার নাম ছিলো প্রিন্স রিজেন্ট। ধারণা করা হয়, মাত্র ২০ বছর বয়সে রাজবংশের তৃতীয় শতকে রাজাভিষেক হয়েছিলো তার। এরপর তিনি দ্বিতীয় র্যামিসেস নামটি গ্রহন করেন।
তিনি আনুমানিক দীর্ঘ ৬৭ বছর শাসন করেছিলেন মিশর। এই সুদীর্ঘ শাষণামলে তিনি অর্জন করেছিলেন অনেক কিছু।
রাজা হওয়ার পর তরুণ দ্বিতীয় র্যামেসিস পরিচালনা করেছিলেন বহু সামরিক অভিযান, দমন করেছিলেন দেশি-বিদেশি জলদস্যুদের, দখল করেছিলেন বিদেশের বহু ভূমি। সম্প্রসারণ করেছিলেন তার রাজত্বের।
তিনি ক্যানানে মিশরীয় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এছাড়া দক্ষিণে নুবিয়া ও লিভ্যান্তেও বহুসংখ্যক সামরিক অভিযানের নেতৃত্ব দেন বলে বাইত আল-ওয়ালি এবং জারফ হুসেইনের রচনায় উল্লেখ পাওয়া যায়। এ কারণে দ্বিতীয় রামিসেসকে ‘দ্য গ্রেট’ উপাধি দেয়া হয়।
প্রভাবশালী এই রাজার মৃত্যুর তিন হাজার বছর পরও তাকে নিয়ে নাটকীয়তা চলতেই থাকে। যার ফলশ্রুতিতে ইতিহাসের প্রথম প্রাচীন রাজা হিসেবে পাসপোর্ট পান তিনি।
এই নাটকীয়তার শুরু ১৮৮১ সালে। সে বছর এক রাখাল একটি গোপন কুঠুরি সন্ধান পায়। সেখানে ছিল দ্বিতীয় র্যামিসেসসহ আরো ৫০জনের মমি।
প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে মরদেহ সংরক্ষণের জন্য তা মমি করার প্রচলন ছিলো। তারা ফেরাউন রাজা ও উচ্চ বংশীয় ব্যক্তিদের মরদেহ সংরক্ষণে মমি করত। তাদের বিশ্বাস ছিলো যে, মৃত্যুর পর যতদিন তাদের দেহ সংরক্ষণ করা যাবে, ততদিন তারা স্বর্গে বাস করবে।
গোপন কুঠুরিতে সন্ধাণ পাওয়া দ্বিতীয় র্যামিসেসের অতি প্রাচীন এই মমি উদ্ধার করার সময় তা সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। তিন হাজার বছরেরও বেশি সময়ে তার মাথার চুল নষ্ট হয়নি। উদ্ধারের পরই মমিটি কায়রো জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। কিন্তু জাদুঘরের আবহাওয়ার জন্য ১০০ বছরের ব্যবধানে ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে এটি।
দ্বিতীয় র্যামিসেসের মমি সংরক্ষণ নিয়ে আধুনিক যুগে মিশর সরকারকে যথেষ্ট ঝামেলা পোহাতে হয়। তার মরদেহে ব্যাকটেরিয়া জন্মে পঁচন ধরতে শুরু করে। তখন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে থাকে। সে সময়ে পৃথিবীতে মমি পুনরুদ্ধারের একমাত্র ব্যবস্থা ছিল ফ্রান্সে। তবে সেখানে মরদেহ নেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে এক বিশেষ নিয়ম।
দেশটির আইন অনুসারে সেখানে জীবিত অথবা মৃত যে কোনো ব্যক্তি প্রবেশ করতে চাইলে তার সঙ্গে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। যেহেতু র্যামিসেসের মমি টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে ফ্রান্সে নিয়ে যেতেই হবে, তাই বাধ্য হয়ে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ তিন হাজার বছর আগের মৃত ফেরাউনের নামে পাসপোর্ট তৈরি করে।
তার পাসপোর্ট বানানো হয় ১৯৭৪ সালে। পাসপোর্টে র্যামিসেসের জন্ম তারিখ দেয়া হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩০৩ সাল এবং পেশা হিসেবে উল্লেখ করা হয় রাজা (মৃত)।
তাকে বহনকারী বিমান ফ্রান্সের মাটিতে অবতরণ করলে রাষ্ট্রীয় সফরে আসা অন্য যে কোনো রাজার মতই ফেরাউনের মমিকেও সামরিক অভিবাদন জানানো হয়। ফলে একমাত্র ফেরাউন হিসেবে দ্বিতীয় র্যামেসিস অন্য কোনো দেশের সামরিক সম্মান পেয়েছেন।
ফ্রান্সে গবেষণায় প্রমাণিত হয়, দ্বিতীয় রামিসেস উচ্চতা ছিল পাঁচ ফিট সাত ইঞ্চি। তার চুল ছিল লাল রঙা। শরিরে আর্থাইটিসের সমস্যা ছিল। দাঁতে ফোঁড়া ছিল। পরীক্ষা করে শরীরে যুদ্ধের ক্ষত চিহ্নও পাওয়া যায়। এসব পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর পুরোপুরি সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শেষে আবারো সম্রাটের স্বদেশ প্রত্যার্বতন ঘটে।
ডেইলি বাংলাদেশ/মাহাদী